Oct. 16th, 2019

salauddin1995: (Default)
 উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
 
 
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিনঅনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
জম্মু ও কাশ্মীরের জন্ম হয়েছিল ১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধএর পর । হেনরি লরেন্সএর পরামর্শে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লর্ড হার্ডিঞ্জ কাশ্মীর উপত্যকাকে তাঁদের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেই ক্ষয় ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে অমৃতসর চুক্তি অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে জম্মুর দোগড়া শাসকদের কাছে বিক্রি করা হয় । তখন থেকে শুরু করে অর্থাৎ ১৮৪৬ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীর মহারাজা দ্বারা শাসিত একটি দেশীয় রাজ্য ছিল ।
চুক্তি অনুসারে এই রাজ্যের বিস্তার ছিল সিন্ধু নদের পশ্চিম দিক থেকে রাভি নদীর পূর্ব দিক পর্যন্ত এবং আয়তন ছিল প্রায় ৮০৯০০ বর্গ মাইল ( ২১০০০০ বর্গ কিমি) । পরবর্তী কালে হুনযা,নাগারএবং গিল গিট এই রাজ্যের সাথে সংযুক্ত হয় ।
দেশ বিভাজনের সময় তৎকালীন মহারাজা হরি সিং ভারত বা পাকিস্তান কারোর সাথেই যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে থাকতে চেয়েছিলেন । তাঁর স্বপ্ন ছিল , ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই তাঁর রাজ্যকে সুইজারল্যান্ড-এর মত একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেবে।

সৃষ্টি[সম্পাদনা]

 
জম্মু ও কাশ্মীরের পতাকা (১৮৪৬-১৯৩৬)
 
জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজার পতাকা (১৮৪৬-১৯৩৬)
দেশীয় রাজ্য হওয়ার আগে কাশ্মীর পাস্তুন দুরানি সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীকালে রণজিৎ সিংহ এটিকে শিখ সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করেন । জম্মু ছিল তখনকার শিখ সাম্রাজ্যের একটি করদ রাজ্য ।
১৮২২ সালে জম্মুর রাজা কিশোর সিং প্রয়াত হলে শিখেরা উত্তরাধিকারী হিসাবে পুত্র গুলাব সিং কে স্বীকৃতী দেয়। গুলাব সিং প্রাথমিকভাবে শিখেদের অধীনে থেকে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করেন ।
জম্মুর শাসক হিসাবে গুলাব সিং ভদ্রাওয়া দখল করেন, কিন্ত এই অভিযানে ওনাকে সামান্য প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তারপর তাঁর রাজ্যসীমায় যুক্ত হয় কিস্ত্বার, যার মন্ত্রী ওয়াজির লাখপত তৎকালীন শাসকের সঙ্গে মনমালিন্য হওয়ার জন্য গুলাব সিং-এর সাহায্য প্রার্থনা করেন। গুলাব সিং-এর সৈন্যদলকে আসতে দেখে কিস্ত্বার রাজ বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করেন। কিস্ত্বার অধিগ্রহণ করায় গুলাব সিং লাদাখ অভিমুখী দুটি রাস্তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করেন, যা পরবর্তীকালে ওই অঞ্চল জয় করার সময় বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল । যদিও সুবিশাল পর্বত এবং হিমবাহ থাকার জন্য গুলাব সিং কে বিশাল সমস্যার মোকাবিলা করতে হয় । গুলাব সিং-এর আধিকারিক জোরওয়ার সিং দোগড়া-দের সহায়তায় দু বারের প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ লাদাখ জয় করেন ।
তার কয়েক বছর পর, ১৮৪০ সালে জেনেরাল জোরওয়ার সিং বালতিস্তান আক্রমণ করেন এবং স্কারদু-র রাজাকে পরাস্ত করেন। ১৮৪১ সালে তিব্বত আক্রমণ করার সময় প্রচণ্ড শীতের প্রকোপে জোরওয়ার সিং-এর প্রায় সমস্ত সৈন্যদলই বিনষ্ট হয় ।
১৮৪৫ সালের শীতকালে ব্রিটিশ এবং শিখদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় । ১৮৪৬ সালে সব্রাওন এর যুদ্ধ পর্যন্ত গুলাব সিং নিরপেক্ষ থাকেন, তারপর তিনি একজন মধ্যস্থ এবং স্যর হেনরি লরেন্স-এর বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। অবশেষে দুটি চুক্তি হয় । প্রথম চুক্তি অনুসারে লাহোর-কে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়া হয়,দশ মিলিয়ন টাকা মূল্যের বিপাশা ও সিন্ধুর নদের মধ্যবর্তী পার্বত্য রাজ্য নানকশাহীর ক্ষতিপূরণের সমতূল্য হিসাবে; এবং দ্বিতীয় চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশরা সাড়ে সাত মিলিয়ন টাকার বিনিময়ে সিন্ধু নদের পূর্বে এবং রাভি নদীর পশ্চিমে অবস্থিত সমস্ত পার্বত্য অঞ্চল গুলাব সিং এর কাছ থেকে নিয়ে নেয় ।
তৎকালীন শিখ সাম্রাজ্যের প্রধান সেনাপতি লাল সিং, যিনি পরবর্তীকালে প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন, কাশ্মীরের শাসনকর্তা ইমামউদ্দিন কে দোগড়াদের প্রতিরোধ করতে অনুরোধ করেছিলেন যারা সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজ্য থেকে শিখদের প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল । ব্রিটিশরা গুলাব সিং এর সহায়তায় কাশ্মীরের শাসনকর্তা ইমামউদ্দিন কে উৎখাত করে এবং কাশ্মীর ও জম্মুর নতুন মহারাজা হিসাবে গুলাব সিং কে নিযুক্ত করে । এই বিশ্বাসঘাতকতা জন্য লাল সিং কে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্রোধের সম্মুখীন হতে হয় । ইমামউদ্দিন ব্রিটিশ এবং গুলাব সিং কে সেইসমস্ত তথ্য পেশ করে যার থেকে জানা যায় যে শিখেরা তাকে দোগড়া সৈন্যদের আক্রমণ করতে পাঠিয়েছিল তখন, যখন সেই সৈন্যদল কাশ্মীর উপত্যকা থেকে শিখ সৈন্যদলকে প্রতিস্থাপন করার জন্য সচেষ্ট হয় । লাল সিং তাঁর পদ থেকে অপসারন এবং পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রবেশ করা থেকে নির্বাসিত করা হয়।

প্রশাসন[সম্পাদনা]

মহারাজা[সম্পাদনা]

ক্রম তালিকানামঅঞ্চল
১.গুলাব সিং১৮৪৬-১৮৫৭
২.রনবীর সিং১৮৫৭-১৮৮৫
৩.প্রতাপ সিং১৮৮৫-১৯২৫
৪.হরি সিং১৯২৫-১৯৪৭

সম্প্রসারণ[সম্পাদনা]

কিছুদিন পরে হুনযা রাজা, গিল গিট অঞ্চল আক্রমণ করেন । গুলাব সিং এর পক্ষে নাথু শাহ্‌ সৈন্য দলের পুরোভাগে থেকে অভিযান শুরু করেন, কিন্তু তিনি ও তাঁর সমস্ত সৈন্যদল বিপর্যস্ত হয়, এবং গিল গিট হুনযা রাজার হাতে চলে যায় । ষেই সঙ্গে আরও যে জায়গা গুলি হুনযা রাজা অধিগ্রহণ করেন সেগুলি হল পুনিয়াল, ইয়াসিন এবং দারেল l এই সময় মহারাজা আস্তর এবং বালতিস্তান থেকে দু দল সৈন্য পাঠান, কিছুকাল যুদ্ধের পর গিল গিট দুর্গ পুনরুদ্ধার হয় । ১৮৫২ সালে ইয়াসিনের গাউর রহমান নেতৃত্বে দোগড়াদের বিলুপ্তি হয় এবং ষেই সময় থেকে আট বছর পর্যন্ত সিন্ধু নদ মহারাজের সীমানা হিসাবে পরিগণিত হয়।
salauddin1995: (Default)
 দূর প্রবাস আমেরিকা

বান্ধবী বনাম বউ
ইমদাদ বাবু
১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:১০ 
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৮
  ১০

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

রান্নাঘরে ঢুকে স্ত্রীকে রোমান্টিক সুরে প্রশ্ন করলাম, জান কী কর?

: নাচতেছি।

Eprothom Alo
: কী বল, আমি তো দেখছি তুমি রান্না করছ।

: তুমি যখন দেখছ আমি রান্না করছি তাহলে আজাইরা প্রশ্ন কর কেন? ঝাঁজের সঙ্গে বলল।

: না মানে, স্ত্রীর খোঁজ খবর নেওয়া তো স্বামীর নৈতিক দায়িত্ব, তাই।

: তাই? কিন্তু তুমি তো এখন দায়িত্ব পালন করতে আসো নাই। তুমি আসছ তোমার ইফতারিগুলো ঠিকমতো বানানো হচ্ছে কিনা তার খোঁজ নিতে।

: ছি, তুমি আমারে ভুল বুঝলা! মনে বড়ই আঘাত পাইলাম।

: ঢং করবা না। শোনো রোজা রেখে প্রতিদিন তোমার এই হাজার পদের ইফতারি আমি বানাতে পারব না।

: কী যে বল। রোজার মাসে যদি একটু বেশি বেশি না খাই তাহলে কী হয়।

: তা তো অবশ্যই। সবাই রোজা রাখে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আর তুমি রোজা রাখ ইফতারি খাবার লোভে।

: আফসোস। স্বামীরে এভাবে খাবারের খোঁটা দিলা।

: না, এটা খোঁটা না। যা সত্য তাই বলছি। রোজা মানে সংযম। মানুষে রোজা রেখে শুকায় আর তুমি? আমি নিশ্চিত তুমি মেপে দেখ তোমার ওজন গত দশ দিনের রোজায় তিন চার কেজি হলেও বাড়ছে।

: এ কী বললা। তাড়াতাড়ি আমার গায়ে একটু থুতু দাও। না হলে নজর লাগবে।

: থু।

: এটা কী করলা? সত্যি সত্যি থুতু দিলা!

: তুমিই তো বললা।

: আফসোস।

: শোনো ঢং করবা না। আমার সহজ কথা আমি রোজা রেখে রোজ রোজ এত রান্নাবাড়া করতে পারব না। একা একা এত কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি মাফ চাই।

: আমি জানি একা একা সংসারের সব কাজ করা কষ্টকর। তবে তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।

: তুমি আমাকে কাজে সাহায্য করবে! তুমি! তোমার মতো অলস মানুষ আমাকে সাহায্য করবে? আমাকে তাও বিশ্বাস করতে বল?

: আরে না। আমি তোমাকে সাহায্য করব কীভাবে। আমি কী রান্না পারি? আমি বরং তোমাকে এ কষ্ট থেকে মুক্তির পরামর্শ দিতে পারি।

: তাই! বল শুনি, তোমার পরামর্শ।

: শোনো ইসলামে চার বিবাহ করার একটা সুন্দর কিউট বিধান আছে। এই বিধানের কারণ কী? কারণ, মেয়েদের যেন কষ্ট কম হয়। দেখ এখন যদি আমার দু–একটা বাড়তি বউ থাকত, তাহলে তোমার কী এত কষ্ট করতে হতো, তুমিই বল? একজনে রান্না করত, একজনে কাপড়চোপড় ধুতো, একজনে ঘর পরিষ্কার করত। খেয়াল করে দেখ উপকার কিন্তু তোমারই হতো। আমার হয়তো একটু খরচ বাড়ত। তবে সেটা কোনো ব্যাপার না। কারণ তুমি আমার স্ত্রী, তোমার জন্য এ কষ্টটুকু আমাকে মেনে নিতেই হবে, ঠিক না?

কথা শেষ করতে পারলাম না। দেখলাম গরম খনতি হাতে এগিয়ে আসছে। বুঝলাম অবস্থা সুবিধার না। এ মহিলার পক্ষে সবই সম্ভব। একটু আগেই থুতু দিয়েছে। অতএব এখানে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপদ নয়, দিলাম দৌড়।

পেছন থেকে স্ত্রী চিৎকার করে বলছে, হারামজাদা তোর আবার বিয়ে করার শখ হইছে সেটা বললেই তো পারিস। হাদিস ছাড়োস কেন? তুই লাগলে চারটা কেন আরও দশটা বিয়ে কর।

ভয়ে বেড রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। হঠাৎ মনে পড়ল যে কথা বলার জন্য রান্নাঘর গিয়েছিলাম তাই তো বলা হয়নি। একটু পর সাহস সঞ্চয় করে আবার রান্নাঘরে গেলাম। উঁকি দিয়ে দেখলাম রান্নায় ব্যস্ত। রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে নরম গলায় বললাম।

: জান, যদি অনুমতি দাও, একটা কথা বলতাম।

: অনুমতি দিলাম না।

: শোনো গণতন্ত্র বলেও তো একটা কথা আছে। কথা বলতে দেওয়া উচিত। রাখা না রাখা সেটা অন্য ব্যাপার।

: আমি এখন খুবই ব্যস্ত। ইফতারির প্রায় সময় হয়ে গেছে। এখনো রান্না শেষ করতে পারিনি। ঢং না করে কী বলবা বলে বিদায় হও।

: না মানে বলছিলাম কী, আমি জানি অনেক কিছু রান্না করছ। তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। রোজা রেখে এত কষ্ট আমি হলেও মানতাম না।

: ভণিতা রেখে মূল পয়েন্টে আসো।

: একটু কী ভর্তা বানানো যাবে?

দেখলাম কাজ বন্ধ করে আমার দিকে হতাশ ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ভয় পেয়ে বলে উঠলাম, না না বানাতে হবে না। এমনিই বললাম। সরি আমার ভুল হয়ে গেছে। এত তরকারি থাকতে তো ভর্তা লাগার কথা না।

তারপর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলাম।

আসলে ছোটবেলা থেকেই ভর্তা আমার খুবই প্রিয়। যে কারণে বউকে প্রায় জ্বালাতন করি। অনেক অনুরোধ করার পর মাঝে মাঝে বানিয়ে দেয়। ছাত্র জীবনে এফ রহমান হলে থাকার সময় বান্ধবী নিতুকে বলতাম ভর্তা বানিয়ে দিতে। ও থাকত রোকেয়া হলে। প্রায় সময় বিভিন্ন রকমের ভর্তা বানিয়ে দিত। জানি না হলে কীভাবে বানাত। কিন্তু সে ভর্তা ছিল অমৃত। হলের রুমমেটদের ভাগ দেওয়ার ভয়ে অনেক কৌশলে সে ভর্তা লুকিয়ে খেতাম। নিতুর হাতের বানানো সেই ভর্তার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।

ভেবেছিলাম এত রান্নার পর আজ আর ভর্তা বানাবে না। কিন্তু রাগারাগি করলেও বউ ঠিকই ভর্তা বানিয়ে দিল। তারাবির নামাজের পর খুব আগ্রহ নিয়ে ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে বসলাম। কিন্তু ভর্তা দিয়ে এক লোকমা ভাত মুখে দিয়েই বুঝলাম এ জিনিস খাওয়া যাবে না।

: এটা কী বানাইছ?

: কেন? ভর্তা।

: এটাকে ভর্তা বলে!

: মানে কী?

: মানে এটাতো ভর্তার ভও হয় নাই।

: ভ হউক আর ব হউক, কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়।

: না, এই মাল তো আমি খাব না।

: খাবে না মানে? অবশ্যই খাবে।

: মানে কী? ভালো না হলেও এই জিনিস আমাকে খেতে হবে? তুমি কী আমাকে জোর করে খাওয়াবে।

: দরকার হলে জোর করেই খাওয়াব। রোজার মধ্যে অনেক কষ্ট করে বানাইছি। ফেলে দেওয়ার জন্য বানাই নি।

: তোমাকে কষ্ট করে কে বানাতে বলেছে? কষ্ট করে না বানায়ে যদি একটু দরদ দিয়ে বানাতে তাইলেই তো ভর্তাটা অমৃত হতো।

: আমার কাছে অত আজাইরা দরদ নাই। আমি অমৃত বানাতে পারি না। যে পারে তার কাছে যাও।

বউ এর কথায় হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, আফসোস। সেই হারানো দিনগুলি যদি আবার ফিরে পেতাম।

: তাই নাকি! কোন দিনগুলি? বউ টিটকারির সুরে প্রশ্ন করে।

: ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলি। আহ কী ছিল সেই সব দিন। হলে থাকতে নিতু ভর্তা বানায়ে দিত। নিতুর হাতের বানানো সে ভর্তার কথা মনে হলে এখনো জিভে পানি এসে যায়। সেগুলো তো ভর্তা ছিল না, ছিল অমৃত।

: তাই নাকি? শোনো ছেলেদের কাছে প্রেমিকার হাতের গোবরও অমৃত মনে হয়। আর বউয়ের হাতের অমৃত মনে হয় ছাগলের লেদা।

: এগুলো কী বলো?

: যা সত্য তাই বলি। প্রেমিকা যদি মুখের সামনে ঘাস ধরে ছেলেরা তৃপ্তি নিয়ে তাও খেয়ে ফেলবে।

: তার কারণ কী জানো? তার কারণ প্রেমিকার মনে থাকে মধু আর মধু। সেই মধুর ছোঁয়ায় ঘাসও অমৃত হয়ে যায়। আর স্ত্রীর মনে থাকে গরম ইস্তিরি। সেই ইস্তিরির ছ্যাঁকায় সব জ্বলে পুড়ে যায়।

: এত বুঝলে বিয়ে করছ কেন?

: ওইটাইতো ভুল করছিরে মা। আগে জানলে শালার বিয়েই করতাম না।

: এই তুমি ওঠ তো, তোমার ভাত খেতে হবে না।

: মানে কী?

: মানে আমার অন্তরে যেহেতু মধু নাই, তাই আমার রান্না তোমার খাওয়ার দরকার নাই। তোমার জন্য আমি আর রান্না করব না।

: আল্লাহকে ভয় কর। রোজার মাস স্বামীরে না খাওয়ায় রাইখ না। স্বামীর সেবা কর, পরকালে এর প্রতিদান পাবা।

: তোর প্রতিদানের গুল্লি মারি। তুই ওঠ খাবার টেবিল থেকে। শুধু এইবেলা না, আজ তোর সেহেরি খাওয়াও বন্ধ।

টান দিয়ে খাবার প্লেটটা সামনে থেকে নিয়ে খাবারগুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিল। তারপর হনহনিয়ে বেডরুমে চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে বোকার মতো বসে রইলাম।

চিন্তা করে দেখলাম রোজার মাসে রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। তাহলে না খেয়েই রোজা রাখতে হবে। তার চেয়ে বরং পরিবেশটা হালকা করে ফেলি। মিনিট বিশেক পরে বেডরুমে গিয়ে মিষ্টি গলায় বললাম, জান কী কর?

: ফুটবল খেলি।

: মিথ্যে বলছ কেন? তুমি তো শুয়ে আছ।

: এই তোমারে না বলেছি আমারে আজাইরা প্রশ্ন করবা না।

: জান, কাল কিন্তু ২৩ মে।

: তো?

: কাল কিন্তু আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।

: তো?

: তো তো কর না। দুনিয়ার সবাই বিয়ে বার্ষিকীতে ভালো মন্দ খায়। অথচ এই দিনে তোমার স্বামী না খেয়ে রোজা রাখবে। এটা কেমন কথা?

: না খেয়ে থাকবে কেন? যাও নিজে রান্না করে খাও।

: আমি জানি এটা তোমার রাগের কথা। আসলে আমারই ভুল হয়েছে। ভর্তাটা কিন্তু ততটা খারাপ ছিল না। ভর্তাটা একটু একটু করে মজা লাগা শুরু হয়েছিল। আসলে সারা দিন রোজা ছিলাম সম্ভবত সে কারণে জিহ্বার টেস্ট পাওয়ার কমে গেছে। তাই প্রথমে টেস্টটা বুঝতে পারিনি। আসল কী জান, সব সমস্যা আমার এই জিহ্বার। আচ্ছা জিহ্বা কী পরিবর্তন করা যায়? তোমার জানাশোনা কোনো ডাক্তার আছে যে জিহ্বা ট্রান্সপ্লান্ট করে।

: তুমি কি আমার সাথে মজা নিচ্ছ?

: না আমি সিরিয়াস। এই মাত্র ডিসিশন নিলাম ফিক্সড ডিপোজিটটা ভাঙিয়ে বিদেশে গিয়ে জিহ্বা ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে আনব। ভাবছি ছাগলের জিহ্বা লাগাব। আমার ধারণা ছাগলের জিহ্বার টেস্ট পাওয়ার বেশি। দেখ না ছাগল যা পায় তাই খায়। তুমি কী বল? আইডিয়াটা দারুণ না।

: অবশ্যই দারুণ। তা লাগাবে যখন, তখন ছাগলেরটা লাগাবে কেন? কুকুরেরটা লাগাও। ওরাও তো সব খায়।

: এভাবে বলছ কেন? তোমার ব্রেন ভালো। তাই তোমার কাছে একটা পরামর্শ চাইছি।

: ন্যাকামি করবে না। যতই তেল মার না কেন, আজ আর তোমার কপালে ভাত নাই। তার চেয়ে বরং সেহেরির সময় একটা নুডলস রান্না করে খেয়ো।

আর কথা বাড়ালাম না। মনে কষ্ট নিয়ে শুয়ে পড়লাম। শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে যেয়ে দেখি বউ আর আমার পিচ্চি দুই মেয়ে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।

: তা শেষ পর্যন্ত কী আমাকে নুডলসই খেতে হবে? ভাত কি আসলেই দিবা না? বউ কে প্রশ্ন করলাম।

: শোনো তোমার এই জিহ্বায় আমার রান্না ভালো লাগবে না। তুমি না বললে জিহ্বা ট্রান্সপ্লান্ট করাবে। আগে সেটা করো তারপরে আমার রান্না খেয়ো। আপাতত নুডলস দিয়ে কাজ চালাও।

বউ হেসে উত্তর দিল। মেয়েরাও মিটিমিটি হাসছে।

: না সেটা কোনো সমস্যা না। আগে তো নুডলস ভালোই লাগত। কিন্তু যেদিন দেখলাম কেকা আপা মুরগির পেটের মধ্যে ঠেইলা ঠেইলা নুডলস ভরছে, সেদিন থেকে নুডলস দেখলেই কেন জানি গাটা গুলায় ওঠে। কিন্তু কী আর করা ভাত যখন দিবাই না, তাইলে নুডলসই খাই।

: হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। এখন খেতে বসো।

বউ মিষ্টি ধমক দিয়ে বলল। দেরি না করে চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। বউ উঠে রান্নাঘরে গেল। ছোট মেয়ে বলল, চোখ বন্ধ করতে। চোখ বন্ধ করলাম। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখি সামনে বিশাল এক প্লেট। প্লেটের মাঝখানে মোমবাতি জ্বলছে, আর চারদিকে সুন্দর করে ভাগে ভাগে সাজানো কয়েক পদের ভর্তা।

: এত ভর্তা কোথায় পেলে?

: আম্মু বানিয়েছে। মেয়ে বলল

: না, নিরব হোটেল থেকে কিনে আনছি। বউ হেসে উত্তর দিল।

: কাজটা ভালো করোনি। নিরব থেকে আনলে কেন? বন্ধু ইয়াসিফের ভর্তা বাড়ি হোটেল থেকে আনতে। তাহলে ওর ও কিছুটা ব্যবসা হতো।

হেসে উত্তর দিলাম। বউও হেসে উঠল।

আব্বু এটা নাও। বলে ছোট মেয়েটি একটি খাম হাতে দিল। যত্ন নিয়ে খামটা খুললাম। বউয়ের লেখা চিঠি। তাতে লেখা, তুমি আমাকে আর কত জ্বালাবে? প্রতিদিন ভর্তা ভর্তা করো জ্বালাও, তাই ইচ্ছে করেই সন্ধ্যায় ভর্তাটা পঁচা বানিয়েছিলাম। আমি তোমার জন্য যখন যা বানাই প্রেমিকার মতো ভালোবাসা দিয়েই বানাই। স্বামী-স্ত্রী তো সবাই হয়। আমরা না হয় বন্ধু হয়েই থাকলাম। শুভ বিবাহ বার্ষিকী।

সময় নিয়ে ধীরে ধীরে চিঠিটি পড়লাম। চোখের কোণায় কী জল ছিল, জানি না। হঠাৎ বড় মেয়ে বলে উঠল, বাবা তুমি কি কাঁদছ?

: আরে না। তোমার আম্মু সম্ভবত ভর্তায় প্রচুর পেঁয়াজ দিয়েছে। ওর ঝাঁজে চোখ জ্বলছে।

দেখলাম দুই মেয়ে মিটিমিটি হাসছে। ছোট মেয়ে হাতে ছুঁড়ি দিয়ে বলল, থাক আর কাঁদতে হবে না। তুমি এখন ভর্তা কাটো।

ফুঁ দিয়ে বউ আর আমি মোমবাতি নেভালাম। এক সাথে ছুঁড়ি দিয়ে ভর্তা কাটলাম। তখন আমাদের দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাল আমাদের ভালোবাসার ফসল, আমাদের দুই রাজকন্যা। সে এক অপার্থিব অনুভূতি। আচ্ছা পৃথিবীটা এত সুন্দর কেন?

বি. দ্রষ্টব্য: ঝগড়া করতে করতেই অনেকগুলো দিন এক সাথে কাটিয়ে দিলাম। ভাবছি বাকি জীবনটাও এমনই ঝগড়া করে কাটিয়ে দেব। তবে সমস্যা হচ্ছে মেয়ে দুটো আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। ওদের কারণে এখন আর প্রাণ ভরে ঝগড়া করতে পারি না। আফসোস।

বি. দ্রষ্টব্যের বিশেষ দ্রষ্টব্য: ও একটি কথা, বন্ধু নিতু আর আমার বউ কিন্তু একজনই। অন্য কাউকে যেন ভর্তা বানিয়ে খাওয়াতে না পারে তাই বন্ধু নিতুকেই বিয়ে করে ফেলেছিলাম।

ইমদাদ বাবু: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ইমেইল: imdadbabu@yahoo.com

© স্বত্ব প্রথম আলো ১৯৯৮ - ২০১৯
সম্পাদক ও প্রকাশক: মতিউর রহমান
প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন,
২০-২১ কারওয়ান বাজার , ঢাকা ১২১৫
ফোন: ৮১৮০০৭৮-৮১, ফ্যাক্স: ৯১৩০৪৯৬,
ইমেইল: info@prothomalo.com

(সংগৃহীত)

Profile

salauddin1995: (Default)
Mohammad Salauddin

October 2019

S M T W T F S
  12345
6789101112
131415 16171819
20212223242526
2728293031  

Style Credit

Expand Cut Tags

No cut tags
Page generated Jul. 18th, 2025 12:58 pm
Powered by Dreamwidth Studios